মা সারদা দেবী এর জীবনের কিছু অংশ || Valuable Biography Of Maa Saroda Debi Part-1

একদিন শ্রীমা ঠাকুরকে খাবার দিতে যাচ্ছেন। মন্দস্বভাব একটি মেয়ে খাবারের থালা চেয়ে নিল ‘মা’ বলে। ঠাকুর খেতে পারলেন না। মায়ের কাছ থেকে ঠাকুর কথা আদায় করে নিতে চাইলেন- “বল আর কখনো কাউকে দিয়ে পাঠাবে না, তুমি নিজে নিয়ে আসবে।” মা তাঁর স্বাধীন সত্তাকে রক্ষা করলেন। সত্যবদ্ধ হলেন না, বরং নির্ভয়ে দিলেন চিরন্তন এক দৈবী প্রতিশ্রুতি: “মা বলে কেউ যদি চায়, না বলতে পারব না।” তারপর আত্মপ্রকাশের যে-কারণ, তা বিস্মৃতপ্রায় অবতার পুরুষকে স্মরণ করিয়ে দিলেন অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক একটি কথায়: “তুমি তো শুধু আমার নও, তুমি জগতেরসকলের।”

ঠাকুরের কাছে সামান্য ভর্ৎসিত হলে মধুর ভাবের সাধিকা এক পাগলিনীকে আগলাতে চাইছেন শ্রীমা, বলছেন, “আমার কাছে পাঠিয়ে দিলেই তো হয়!” কী মৌলিকতাপূর্ণ ভাব! দায় নেওয়ার কী আকুল আগ্রহ! আধুনিক মানুষ শ্রীরামকৃষ্ণ স্মিতহাস্যে মায়ের এই স্বাধীন মনোভাবকে মান্যতা দিচ্ছেন।

দক্ষিণেশ্বরে বাসকালে কালীপদ ঘোষের স্ত্রীকে মায়ের কাছে পাঠানো, ত্যাগী সন্তানদের অনেকের কাছে মায়ের স্বরূপ উদ্‌ঘাটন, সমাধি ভাঙানোর জন্য কী কী মন্ত্র জপ করণীয় ইত্যাদি ঘটনার মধ্যে রয়েছে ঠাকুরের মাকে দায়গ্রহণের উপযুক্ত করে তোলার আভাস। তাছাড়া যোগীন ও সারদাপ্রসন্নকে দীক্ষা দেওয়ার জন্য ঠাকুর মাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। শ্রীমা যেন স্বাভাবিকভাবে ঠাকুরের কাছ থেকে পরবর্তী জীবনের করণীয় দায়িত্বগুলি গ্রহণ করেছিলেন।

‘আত্মাবলুপ্তি’ ছিল মায়ের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের মতোই সহজাত। ভক্ত সরযূবালা লিখেছেন: “মায়ের ঈশ্বরত্ব এখানেই যে, মায়ের ভিতর আদৌ ‘অহঙ্কার’ নেই। জীবমাত্রই অহং-এ ভরা। এই যে হাজার হাজার লোক মায়ের পায়ের কাছে ‘তুমি লক্ষ্মী, তুমি জগদম্বা’ বলে লুটিয়ে পড়ছে, মানুষ হলে মা অহঙ্কারে ফেঁপে ফুলে উঠতেন। অত মান হজম করা কি মানুষের শক্তি।” একদিন নলিনীদিকে শ্রীমা বলেন, “আমি কি, মা? ঠাকুরই সব। তোমরা ঠাকুরের কাছে এই বল- (হাতজোড় করে মা ঠাকুরকে প্রণাম করলেন) আমার ‘আমিত্ব’ যেন না আসে।”

শ্রীরামকৃষ্ণ ও শ্রী মা সারদা দেবী এর ভক্ত পুঁথিকার অক্ষয়কুমার সেনের অভিমান ছিল, শ্রীমা তাঁকে কম ভালবাসেন। সেই মর্মে মায়ের কাছে তিনি চিঠি লিখেছিলেন। শ্রীমা সেই চিঠির উত্তরে পত্রলেখককে লিখতে বলেছিলেন, “লিখে দাও, আমার মধ্যে এক বই দুই নাই।” অর্থাৎ, তিনি সকলকে এক দেখেন। এই এক দেখার নাম অদ্বৈত- জ্ঞান। সচরাচর দৃষ্ট নারীজীবনের ভাব, উচ্ছ্বাস শ্রীমা সজ্ঞানে পরিহার করেছিলেন। আবার একইসঙ্গে হয়ে উঠেছিলেন করুণা-ভালবাসা, স্নেহ-মমতার এক অনন্ত প্রস্রবণ।শ্রীমা তখন জয়রামবাটীতে।

এক রাত্রে সেবক লক্ষ করলেন মা বিছানায় নেই। খুঁজতে বেরিয়ে দেখলেন, শ্রীমা বাঁহাতে একটি হ্যারিকেন আর ডানহাতে একটি খুরপি দিয়ে তাঁর ঘরের সামনের এবড়ো-খেবড়ো পথের ইট-কাঠ-পাথর তুলে তুলে জায়গাটা সমান করে দিচ্ছেন, যাতে তাঁর কাছেআসতে কারও কষ্ট না হয়! ঘটনাটি শ্রীমায়ের সমগ্র জীবনের প্রতীকরূপ নির্যাস। একহাতে হ্যারিকেন মানে জ্ঞানের প্রতীক। আর অন্যহাতে খুরপি, সেটি কর্মের প্রতীক। শ্রীমা অদ্বৈতজ্ঞান আঁচলে বেঁধে কর্ম করেছেন অবিরাম- যে-কর্ম জগৎকল্যাণের, লোকসংগ্রহের। তাঁর কাছে পৌঁছনোর পথের কণ্টক তিনি নিজেই জগৎজোড়া সন্তানদের জন্য তুলে সরিয়ে দিচ্ছেন, যাতে তারা নির্বিবাদে, সহজে তাঁর কাছে পৌঁছতে পারে।একদিকে আদর্শ ও উদ্দেশ্য হিসেবে নিজে সহজ হয়ে রয়েছেন, আবার অন্যদিকে তাঁর কাছে পৌঁছনোর পথটিও সুগম করে দিচ্ছেন। জ্ঞান ও কর্মের এক অনবদ্য মৌলিক সমন্বয়।

শ্রীমা বলেছেন, “ভালবাসাই আমাদের আসল। ভালবাসাতেই তাঁর সংসার গড়ে উঠেছে।” শ্রীরামকৃষ্ণের বিশ্বপ্রেম এবারে সারদা-প্রস্রবণের মধ্য দিয়ে জগতকে প্লাবিত করছে। মায়ের সমগ্র জীবনটিই ছিল এক দীর্ঘ নীরব প্রার্থনা।

কালের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মনোভাবটি শ্রীমার মধ্যে সুস্পষ্টরূপে ছিল। দুর্গাপুরী ইংরেজি পড়বেন কি না সে-বিষয়ে মতদ্বৈধ হলে শ্রীমা স্পষ্ট মত দেন, “আমার মেয়ে দুর্গা ইংরেজি পড়বে।” সেইরকম, ব্রহ্মচারীদের জ্ঞানার্জনস্পৃহা বাড়ানোর জন্য তিনি সচেষ্ট ছিলেন। তাঁর সেবায় নিযুক্ত ব্রহ্মচারীদের তিনি একদিন বলেছিলেন, “ওদেশ থেকে অনেক সাহেব-সুবো ভক্ত আসবে; তোমরা ইংরেজি লেখাপড়া শিখে নাও।” শ্রীমা একাজে প্রথমে স্বামী ধর্মানন্দ এবং পরে ঢাকার কৃষ্ণভূষণবাবুকে নিযুক্ত করেন।

স্বামী মাধবানন্দ লিখেছেন, “শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁহার বিবিধ সাধনার অন্তে নিজ সহধর্মিণীকে দেবীজ্ঞানে যথাবিধি পুজা করিয়া তাঁহার পাদপদ্মে জপমালাদি বাহ্য উপকরণসহ ঐ সকল সাধনার ফল এবং নিজেকে সমর্পণ করেন। শ্রীসারদা দেবী স্বামীর নিকট এই দেবদুর্লভ সম্মান প্রাপ্ত হইয়াও সম্পূর্ণ নিরভিমান ছিলেন, ইহা হইতেই তাঁহার আধ্যাত্মিক শক্তির গভীরতা অনুমান করা যায়।”

জনৈক স্ত্রীভক্ত মায়ের শেষ অসুখের সময়একদিন তাঁকে ‘তুমি জগদম্বা, তুমিই সব’ ইত্যাদি বলে যখন প্রশংসা করছেন, অমনি মা রুক্ষস্বরে বলে উঠলেন, “যাও, যাও, ‘জগদম্বা’। তিনি দয়া করে পায়ে আশ্রয় দিয়েছিলেন বলে বর্তে গেছি! ‘তুমি জগদম্বা। তুমি হেন!’ বেরোও এখান থেকে।” আসলে মা ভক্তের আন্তরিক বিশ্বাসে আঘাত না দিলেও এই প্রকার স্তুতিমূলক প্রশংসাবাক্য সহ্য করতে পারতেন না। করুণারূপিণী মায়ের জীবনে এরকম ঘটনা মাত্র এই একটি, যেখানে তিনি তাঁর কাছ থেকে কাউকে বের হতে বলেছিলেন।

বাহ্যভূমিতে শ্রীমায়ের অস্তিত্বের পূর্ণপ্রকাশ উপরি-উক্ত ঘটনাটি। জগতে যেখানে মানুষ স্তবস্তুতি প্রশংসার কাঙাল, সামান্য শ্লেষ, নিন্দা- সমালোচনা অসহ্য, সেখানে দাঁড়িয়ে শ্রীমা যেন নিজেকে নিঃশেষে উজাড় করে জগতকে জানিয়েছেন, স্বরূপে তিনি সর্বদেবদেবী ভগবতী হলেও যেখানে ‘শ্রীরামকৃষ্ণ’ উপস্থিত সেখানে তিনি ‘তত্ত্বা বরঞ্জিতা কারা’ এক দীনহীন দাসী মাত্র।

একবার প্রচুর ‘খাঁটি দুধ’ নিয়ে গোপেশ মহারাজ জয়রামবাটী চললেন। কিন্তু পথে দেখতে পেলেন তাতে ছোট একটি মাছ রয়েছে। তাঁর মনে হল, ওই দুধ ঠাকুরসেবায় লাগবে না; সুতরাং ফেলে দেওয়াই বিধেয়। ফেলে দেওয়ার কথা শুনে মা বললেন, “ফেলবে কেন? ঠাকুরের ভোগে না দিলেও বাড়ির ছেলেপুলে আছে, তারা তো খেতে পারবে।”

______ Source By Wikipedia ( শ্রী মা সারদা দেবী : এক মৌলিক ব্যাক্তিত্ব )

Biography Of Maa Saroda Debi:-- Join Us
Join Our FB Page --- Click Now
SSC MTS, Gd, cgl, chsl
আমাদের এখানে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরের পরীক্ষার প্রস্তুতি , রামকৃষ্ণ মিশনের অ্যাডমিসন ও নবোদয় স্কুলে ভর্তির পরীক্ষার জন্য কোচিং দেওয়া হয়।। জয় মা সারদা দেবী।
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now

Leave a Comment

error: Content is protected !!