Periodic Table (পর্যায় সারণী) সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:–
উনবিংশ শতকের প্রথম দিকে খুব বেশি সংখ্যক মৌলের পরিচয় জানা ছিল না। বিজ্ঞানীরা সেই সময়কার আবিষ্কৃত মৌলগুলির মধ্যে কিছু সমধর্মী মৌল লক্ষ করেন। আবার ওই মৌলদের পারমাণবিক গুরুত্বের সঙ্গে তাদের সমধর্মিতার একটা মিলও খুঁজে পান। পাশাপাশি ধর্মের মিল নেই এমন মৌলদের পারমাণবিক গুরুত্বের পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের ধর্মের পরিবর্তনের প্রবণতাও খুঁজে পেতে সমর্থ হন। এই সময় থেকে প্রাপ্ত মৌলগুলিকে তাদের পারমাণবিক গুরুত্বের ওপর ভিত্তি করে একটি ছক বা টেবিলে সাজানোর চেষ্টা শুরু হয়। এইরূপ সাজানোর কাঠামোটি ছিল- ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক গুরুত্ব অনুসারে সমধর্মী মৌলগুলি উল্লম্বভাবে এবং ভিন্নধর্মী মৌলগুলি অনুভূমিকভাবে অবস্থান করবে। এই কাঠামোই বিভিন্ন পরিবর্তন ও সংশোধনের মাধ্যমে পরে পর্যায় সারণি হিসেবে পরিগণিত হয়। অনেক বিজ্ঞানী পর্যায় সারণি গঠনের চেষ্টা করেছেন। আমরা তাঁদের মধ্যে। তিনজনের অবদানের কথা জানব। এঁরা হলেন-ডোবেরাইনার, লোথার মেয়ার ও মেন্ডেলিভ।
ডোবেরাইনারের ত্রয়ী সূত্র:
রাসায়নিক ধর্মে মিল আছে এমন তিনটি মৌলকে ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক গুরুত্বের ভিত্তিতে সাজালে দেখা যাবে ।
প্রথম ও তৃতীয় মৌলের পারমাণবিক গুরুত্বের গড় দ্বিতীয় মৌলটির পারমাণবিক গুরুত্বের প্রায় সমান হয়।
কম মৌল জানা থাকায় ত্রয়ী সূত্র অনেক। মৌলের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। যেমন — Li(6.94),Na(23.00),K (39.10)
Mendeliv :–
রুশ রসায়নবিদ ডিমিত্রি মেন্ডেলিভ 1869 খ্রিস্টাব্দে তাঁর পর্যায় সূত্র পেশ করেন।
তিনি যখন ধর্মের ভিত্তিতে মৌলগুলিকে বিন্যস্ত করতে শুরু করেন তখন 63টি মৌল জানা ছিল।
তিনি মৌলগুলির পরীক্ষালব্ধ ভৌত ধর্ম, যেমন-পারমাণবিক ওজন, ঘনত্ব, গলনাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক প্রভৃতি এবং রাসায়নিক আচরণ নিয়ে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেন।
মেন্ডেলিভের পর্যায় সূত্র 🙁 Perodic Table)
মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম তাদের পারমাণবিকভরের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে পুনরাবৃত্ত হয়। মেন্ডেলিভ সর্বধর্মী মৌলগুলিকে পারমাণবিক গুরুত্ব বৃদ্ধি অনুযায়ী উল্লম্বভাবে।এবং পারমাণবিক গুরুত্বের ক্রমশ। বৃদ্ধি অনুযায়ী অনুভূমিকভাবে সাজান। উল্লম্ব স্তস্তকে বলা হয় শ্রেণি এবং অনুভূমিক সারিকে বলা হয় পর্যায়। এইরূপ প্রস্তুত টেবিলকে বলা হয় মেন্ডেলিভের পর্যায় সারণি।
আধুনিক পর্যায় সূত্র :—
মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি তাদের পরমাণু ক্রমাঙ্কের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে পুনরাবৃত্ত হয়।
পরমাণু ক্রমাঙ্কের ওপর ভিত্তি করে আধুনিক দীর্ঘ পর্যায় সারণি প্রস্তুত করা হয়েছে।
এই পর্যায় সারণিতে 18টি গ্রুপ বা শ্রেণি আছে। কোনো A/B উপশ্রেণি নেই।
এতে মেন্ডেলিভের পর্যায় সারণির মতো 7 টি পর্যায় আছে।
প্রথম পর্যায়ে ২টি মৌল,
দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে ৪টি করে মৌল,
চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ে 18টি করে মৌল এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম পর্যায়ে 32টি করে মৌল আছে।
দীর্ঘ পর্যায় সারণির কয়েকটি গ্রুপের প্রাথমিক পরিচয়:–( Periodic Table (পর্যায় সারণী)
গ্রুপ-1:
এই গ্রুপের মৌলগুলিকে ক্ষার ধাতু (alkali metal) বলা হয়। এদের মধ্যে লিথিয়াম (Li), সোডিয়াম (Na), পটাশিয়াম (k), রুবিডিয়াম (Rb) ও সিজিয়াম (Cs) স্বাভাবিক মৌল ফ্রানসিয়াম (Fr)( তেজস্ক্রিয় মৌল)
আরবীয়রা উদ্ভিজ্জ ছাই থেকে জলের নির্বাসের মাধ্যমে সোডিয়াম কার্বনেট (No₂CO3) ও পটাশিয়াম কার্বনেট তৈরি করতেন। এগুলি ক্ষারধর্মী লবণ। পোড়া গাছের ছাইকে আরবীয় ভাষায় al-qis (মতান্তরে alquall বলা হয় )এর থেকে alkali কথাটি এসেছে।
সেই জন্য গ্রুপ 1-এর সমস্ত ধাতুকেই alkali metal বা ক্ষার ধাতু বলে ।
গ্রুপ-2:-
এই গ্রুপের মৌলগুলি হলো বেরিলিয়াম (Be), ম্যাগনেশিয়াম (Mg), ক্যালশিয়াম (Ca), স্ট্রনশিয়াম(Sr),বেরিয়াম (Ba) ও রেডিয়াম (Ra)। Ra তেজস্ক্রিয় মৌল, বাকিগুলি স্বাভাবিক মৌল।
এই গ্রুপের বেরিলিয়াম ছাড়া বাকি মৌলগুলিকে ক্ষার মৃত্তিকা ধাতু (alkaline earth metals) বলা হয়। প্রাচীন রসায়নবিদ গণ যে সমস্ত পদার্থ আগুনেও অপরিবর্তিত থাকে তাদের মাটি বা মৃত্তিকা (earth) বলতেন। Mg, Ca, Sr, Ba বা এদের অক্সাইডগুলি উচ্চ তাপেও অপরিবর্তিত থাকে।
গ্রুপ 17:–
এইগ্রপের প্রথম চারটি স্বাভাবিক মৌল-
ফুওরিন (9), ক্লোরিন (17), ব্রোমিন (35) ও আয়োডিন (53) এবং তেজস্ক্রিয় মৌল অ্যাস্টাটিন (85)-কে হ্যালোজেন (halogens) মৌল বলে।
যদিও মূলত প্রথম চারটিই মৌল হ্যালোজেন হিসেবে পরিচিত।
এর অর্থ সামুদ্রিক লবণ উৎপাদনকারী। এই জন্য গ্রুপ 17-এর মৌলগুলিকে হ্যালোজেন বলা হয়।
গ্রুপ-18:
এই গ্রুপের চটি মৌল-হিলিয়াম (He), নিয়ন (Ne), আর্গন (Ar), ক্রিপটন (Cr) জেনন (Xe) ও রেডন (Rn)-কে বলা হয় নোবল মৌল বা নোবল গ্যাস (noble gases), কারণ এরা সকলেই গ্যাসীয় বলে।
প্রতিটি মৌলের সবচেয়ে বাইরের কক্ষে সর্বোচ্চ ৪টি করে ইলেকট্রন থাকায় এরা সহজে রাসায়নিক বিক্রিয়া করেনা, তাই এদের ভদ্র বা নোবল গ্যাস বলে। এদেরকে নিষ্ক্রিয় গ্যাস (inert gas) বলে।
সন্ধিগত ধাতু:-
চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ পর্যায়ের তৃতীয় শ্রেণি থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি পর্যায়ে 10টি করে মোট 30 টি মৌলকে সন্ধিগত মৌল বলে।
এরা সকলেই ধাতু। তাই এই 30টি মৌলকে সন্ধিগত ধাতুও বলা হয়।
‘সন্ধিগত’ নামকরণের কারণ-
মৌলগুলি গ্রুপ 1 ও গ্রুপ 2-এর অতি সক্রিয় ধাতু এবং গ্রুপ 13 ও গ্রুপ 14-এর যথেষ্ট কম সক্রিয় ধাতুর মধ্যে ধর্মের সংযোগ রক্ষা করে বা সন্ধিগত মৌল।
ইউরেনিয়ামত্তর মৌল:-( Periodic Table (পর্যায় সারণী)
92 পরমাণু ক্রমাঙ্কবিশিষ্ট তেজস্ক্রিয় মৌল ইউরেনিয়ামের বিবর্তী মৌলগুলিকে ইউরেনিয়াম-উত্তর মৌল বা transuranic elements বলা হয়।
বর্তমানে জানা গেছে 98 পরমাণু ক্রমাঙ্ক পর্যন্ত মৌলগুলি প্রকৃতিতেই আছে, তবে খুব অল্প পরিমাণে।
99 থেকে 118 পর্যন্ত মৌলগুলি ইউরেনিয়াম-উত্তর মৌল।
পারমাণবিক ব্যাসার্ধ:–
কোনো মৌলের একটি বিচ্ছিন্ন পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে সর্ববহিস্থ ইলেক্টন কক্ষের দূরত্বকে বলে মৌলটির পারমাণবিক ব্যাসার্ধ।
পারমাণবিক ব্যাসার্ধের পর্যায়গত ধর্ম:
একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে পরমাণু ক্রমাঙ্ক বৃদ্ধির সঙ্গে অর্থাৎ (বামদিক থেকে ডানদিকে) পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কমতে থাকে, কিন্তু শেষ গ্রুপে (18) আবার বাড়ে।
একটি নির্দিষ্ট গ্রুপে পরমাণু ক্রমাঙ্ক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে (অর্থাৎ ক্রমশ নীচে) পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বাড়তে থাকে।
একক: —
পারমাণবিক ব্যাসার্ধের পরিচিত একক হলো অ্যাংস্ট্রম (A)। বর্তমানে যা SI এককে পিকোমিটার (pm)।
আয়নাইজেশন শক্তি: [Periodic Table (পর্যায় সারণী)]
একটি বিচ্ছিন্ন ও প্রশম গ্যাসীয় পরমাণুর সর্ববহিস্থ কক্ষের একটি ইলেকট্রনকে সম্পূর্ণরূপে কক্ষচ্যুত করে পরমাণুটিকে একক ধনাত্মক আধানযুক্ত আয়নে পরিণত করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তিকে আয়নাইজেশন শক্তি বলে।
ধরো , M হলো মৌলটির একটি পরমাণু।
তাহলে-M (গ্যাসীয়) + আয়নাইজেশন শক্তি → M’ (গ্যাসীয়)+e
আয়নাইজেশন শক্তির পর্যায়গত ধর্ম:
কোনো নির্দিষ্ট পর্যায়ে পরমাণু ক্রমাঙ্ক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আয়নাইজেশন শক্তি বাড়তে থাকে।
কোনো নির্দিষ্ট গ্রুপে পরমাণু ক্রমাঙ্ক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আয়নাইজেশন শক্তি কমতে থাকে।
একক: কিলোজুল/মোল বা ইলেকট্রন ভোল্ট/অ্যাটম ।
তড়িৎ ঋণাত্মকতা: —
অণুর মধ্যে দুটি পরমাণু নিজেদের একটি করে ইলেকট্রন ব্যবহার করে একটি সমযোজী বন্ধনীর দ্বারা যুক্ত হতে পারে।
এখন ওই দুটি বন্ধনী-ইলেকট্রনকে দুটি পরমানুর কাছে টানতে চাই। সমযোজী বন্ধনীর ইলেকট্রন জোড়কে কাছে টানার এই প্রবণতাকেই সংশ্লিষ্ট মৌলটির তড়িৎ ঋণাত্মকতা বলে।
তড়িৎ ঋণাত্মকতার পর্যায়গত ধর্ম: —
নির্দিষ্ট পর্যায়ে পরমাণু ক্রমাঙ্ক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তড়িৎ ঋণাত্মকতা বাড়তে থাকে। নির্দিষ্ট গ্রুপে পরমাণু ক্রমাঙ্ক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তড়িৎ ঋণাত্মকতা কমতে থাকে।
পর্যায় সারণিতে সবচেয়ে তড়িৎ ঋণাত্মকধর্মী মৌল হলো ফ্লুওরিন এবং সবচেয়ে কম অপরাধর্মী মৌল হলো গ্রুপ 1-এর শেষ স্বাভাবিক মৌল সিজিয়াম।
জারণ বিজারণ ধর্ম: —{Periodic Table (পর্যায় সারণী)}
জারণ ও বিজারণের আধুনিক সংজ্ঞা অনুসারে ইলেকট্রন ত্যাগ করাকে বলা হয় জারণ, ইলেকট্রন গ্রহণ করাকে বলে বিজারণ। কোনো মৌলের বর্জিত ইলেকট্রন যে পদার্থ গ্রহণ করবে তার বিজারণ ঘটবে।
অর্থাৎ, মৌলটি ইলেকট্রন ছেড়ে দিয়ে নিজে জারিত হচ্ছে কিন্তু অন্য পদার্থকে বিজারিত করছে।
অন্য কথায়, যে মৌল যত সহজে ইলেকট্রন ত্যাগ করে, সেটি তত বেশি বিজারণধর্মী হয়।
সুতরাং বলা যায়, আয়নাইজেশন শক্তি কম হলে বিজারণ ক্ষমতা বেশি হবে।
জারণ-বিজারণের পর্যায়গত ধর্ম:–
নির্দিষ্ট পর্যায়ে পরমাণু ক্রমাঙ্ক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জারণ ধর্ম বাড়তে থাকে, বিজারণ ধর্ম কমতে থাকে।
নির্দিষ্ট গ্রুপে ওপর থেকে নীচে বিজারণ ধর্ম বাড়তে থাকে, জারণ ধর্ম কমতে থাকে।
প্রশ্ন :-
জারণ ধর্মের উর্ধ্বক্রম অনুসারে সাজাও-AI, O, F, CI ?
প্রশ্ন:-
কোনটি তীব্রতম জারণধর্মী এবং কোনটি তীব্রতম বিজারণধর্মী বলো-Na, K, O, N।
WBCS Official Website—- Click Here